শিক্ষাজীবন: বাবা-ছেলের দুই সময়ের গল্প


রিয়াদ, পঞ্চগড়ের একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল প্রকাশের দিন অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের রোল নম্বর আর জন্মতারিখ দিয়ে লগইন করে দেখলো—সে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে।
রিয়াদ খবরটা বাবাকে জানালো। কলেজশিক্ষক বাবা শুনে খুশি হলেন। স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘আমি যখন তোর বয়সে ছিলাম, তখন ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতো পত্রিকায়। বিজ্ঞপ্তি বের হওয়ার পর বাসে করে পুরো একদিন জার্নি করে ঢাকায় যাই। কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম তোলা, আবার ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিয়েছিলাম। ফরমের ফি জমা দিতে ব্যাংকে গিয়েও ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন ধরে থাকতে হতো। টাকা জমা, রসিদ কাটা—সবই হাতে হাতে।’
খরচ হতো অনেক। ঢাকায় আসাযাওয়া ও থাকার খরচ জোগাড় করে যাত্রা শুরু করতে হতো। রিয়াদ বললো, “আমরা তো এখন অনলাইনে ফরম পূরণ করি। মোবাইল দিয়েই জমা দিয়ে দিই। প্রবেশপত্রও নিজেরাই ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারি।’
বাবা বললেন, ‘এখন তো বিসিএস পরীক্ষার ফরমও ঘরে বসে পূরণ করা যায়। আমাদের সময় বিসিএসের পরীক্ষাও ওই একই কায়দায় দিতে হতো।’
রিয়াদ বললো, ‘আমরা স্কুল বদলাতেও অনলাইন ফরম পূরণ করি। বোর্ড পরিবর্তনের আবেদনও এখন অনলাইনে যায়। আগে স্কুলে ঘুরতে হতো, এখন মোবাইলে দিয়েই হয়ে যায়।’
বাবা বললেন, “গ্রামাঞ্চলে এখনো সবাই সহজে এসব করতে পারে না। ইন্টারনেট সমস্যা আছে, অনেক জায়গায় অনলাইন ফরম পূরণের নিয়ম জানা নেই। তখন ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেবাকেন্দ্র, বা বাজারের কোনো কম্পিউটারের দোকান থেকে করতে নিতে হয়।’
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা কিভাবে কাজগুলো করে জানিস নাকি? বাবার এ প্রশ্নে রিয়াদ বললো, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে ‘Accessibility Support’ অপশন রাখছে। ভর্তি ফরমে 'বিশেষ সহায়তার প্রয়োজন' বলে আলাদা সেকশন যোগ করা হয়েছে।’
বাবা বললেন, মাহফুজ নামে একজন ছেলের কথা শুনেছি—স্ক্রিন রিডার অ্যাপ দিয়ে নিজেই ফরম পূরণ করে ভর্তি হয়েছিল। যদিও প্রযুক্তি এখনো সবার কাছে পুরোপুরি পৌঁছায়নি। ডিজিটাল শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছে, তবে সামনে আরও কাজ করতে হবে। সত্যিকারের সাফল্য তখনই আসবে, যখন প্রতিটি ছাত্রছাত্রী, প্রতিটি বাবা-মা নিজ হাতে অনলাইনে নিজেদের কাজ করতে পারবে।’
এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০০-রও বেশি সরকারি সেবা নিয়ে চালু হচ্ছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন আউটলেট। চলমান ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এতে যুক্ত করা হবে। সেখানেও পাওয়া যাবে উল্লিখিত সেবাটি।
Subscribe to my newsletter
Read articles from mohammad faisal Haidere directly inside your inbox. Subscribe to the newsletter, and don't miss out.
Written by
